অনলাইনে পণ্যের মতো বিক্রি হচ্ছে প্রশ্নপত্র

অনলাইনে পণ্যের মতো বিক্রি হচ্ছে প্রশ্নপত্র

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্যের মত বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষার ফাঁস করা প্রশ্ন। তবে এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এর মূল হোতারা। প্রযুক্তির কল্যাণে তা রোধ করা যেনো কঠিন হয়ে পড়েছে। গতকাল সোমবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পর এবার ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্নও ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ফাঁস করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। সোমবার সকাল ১০টায় ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষাটি শুরু হয়। শেষ হয় দুপুর ১টায়। রোববার রাত থেকে ফেসবুক, হোয়াসটঅ্যাপ, ইমোসহ বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে নজর রাখার পর সকাল ৮টা ০৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ক সেটের প্রশ্নপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপের ‘ইংলিশ ফার্স্ট পার্ট ২০১৮’ নামের একটি গ্রুপে পাওয়া যায়। এরপর ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নটি ছড়িয়ে যায়। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গে ওই প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। তবে, রোববার রাত ১১টা ৪৪ মিনিটে প্রশ্ন দেওয়ার দাবি করছে একটি ফেসবুক আইডি। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘ইংরেজি প্রথম পত্র প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়সহ আমরাও তদারকিতে আছি।’ এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন একই কায়দায় ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়। বাংলা প্রথম পত্রের বহুনির্বাচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই তা ফেসবুকে পাওয়া যায়। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনি) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল যায়। এদিকে, প্রশ্নফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণার সিদ্ধান্ত স্থায়ী সমাধান নয় জানিয়ে শিক্ষাবিদরা বলছেন, ফাঁস রোধে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতির আধুনিকায়ন জরুরি। এছাড়া, বার বার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে বলেও মত তাদের। এদিকে, একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার প্রভাব পড়েছে কোমলমতি পরীক্ষার্থীদের ওপর। অভিভাবকরা বলছেন, পুনরায় পরীক্ষার নেওয়ার সিদ্ধান্ত ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপর। প্রশ্ন ফাঁসকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতেরও দাবি তাদের। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন নির্বিকার থাকার পর রোববার পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর অপসারণ দাবি : প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে না পারা ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ নিতে ‘উৎসাহিত’ করার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অপসারণের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। গতকাল সোমবার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে এ দাবি জানান। তার এই দাবির পর সংসদের বৈঠকে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এই দাবি শুনেছেন, তিনি তার বিবেচনায় যেটুকু করা প্রয়োজন, জাতির স্বার্থে অবশ্যই তা করবেন।’ গতকাল সংসদে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে কথা বলেন জাতীয় পার্টির এমপি জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, প্রতিদিন পত্রিকায় দেখি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর। প্রশ্নপত্র ফাঁস মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রোববার বলা হয়েছিল, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এরপর আজকেই (সোমবার) ‘তুষার শুভ্র’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে বলা হয়েছে, তাদের কাছে প্রশ্নপত্র রয়েছে। এটা নিতে হলে এত টাকা দিতে হবে। বিষয়টি পত্রিকায়ও এসেছে। তাহলে এটা কেন হচ্ছে?’ জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক অর্জনও হয়েছে। কিন্তু আগামী প্রজন্মকে আমরা সত্যিকার শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পেরে কেবল সনদ দেওয়ার জন্য শিক্ষিত করি, তা হবে অর্থহীন। এই সনদধারী শিক্ষার্থীরা কিছুই পারবেন না। তিনি বলেন, আমরা আগামী প্রজন্মকে দিয়ে জিডিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখ-লাখ শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসছে, চাকরি পাচ্ছে না। এসব চাকরি-প্রার্থীরা বাংলা ও ইংরেজিতে চাকরির দরখাস্তও লিখতে পারে না। গোল্ডেন জিপিএ-প্রাপ্তরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। শিক্ষার গুণগত মান অর্জন করতে পারছি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে। ছাত্ররা গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে বেরিয়ে আসছে কিন্তু কিছুই পারে না। তারা বাংলা লিখতে পারে না, ইংরেজিও না। এই যদি পরিস্থিতি হয়, তাহলে আমরা কার কাছে দেশটি রেখে যাবো? প্রধানমন্ত্রী বা অন্যদের জায়গায় যারা আসবেন, তারা তো শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হতে হবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, শিক্ষামন্ত্রী কয়েকদিন আগে কর্মকর্তাদের বৈঠকে বলেছেন, আপনারা ঘুষ খান, তবে সহনীয় পর্যায় খাবেন। আমিও ঘুষ খাই, অনেক মন্ত্রী ঘুষ খায়। এটা বলার পরে উনি আর মন্ত্রী থাকতে পারেন? তিনি তো ঘুষকে উৎসাহিত করছেন। এই কথা যখন ছাত্ররা শুনবেন, মন্ত্রী ঘুষ খাওয়ার কথা বলছেন, তখন যখন মন্ত্রী ঘুষের কথা বলেন, তখন তার কথা তো আর কেউ শুনবেন না। তার সচিব শুনবেন না, কেউ শুনবে না।
তাহলে কী করে কঠোরভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করবেন, তা বোধগম্য নয়। তার একথা বলার পর ওই দিনই শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত ছিল। বিরোধী দলীয় এই এমপি বলেন, আমি দাবি করছি, অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রী তার ব্যর্থতা, দুর্নীতি, অনিয়মের দায় স্বীকার করে নিয়ে পদত্যাগ করুন। না হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, তাকে বরখাস্ত করে শিক্ষাখাতের উন্নতির জন্য গুণগুতমান বৃদ্ধি কতে আপনি নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করুন। আমি আশা করবো, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment